দ্রাব্যতার গুণফল একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা রসায়ন, জীববিজ্ঞান, প্রকৌশল ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, দ্রাব্যতার গুণফল ব্যবহার করে বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ প্রস্তুত করা হয়, ঔষধ তৈরি করা হয়, এবং পানি পরিশোধন করা হয়।
দ্রাব্যতার গুণফল কাকে বলে?
কোনো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো তড়িৎ বিশ্লেষ্য লবণের সম্পৃক্ত দ্রবণে উৎপন্ন আয়নসমূহের গ্রাম প্রতিলিটার বা মোল প্রতিলিটার এককে ঘনমাত্রার গুণফলকে সংশ্লিষ্ট লবণের দ্রাব্যতার গুণফল বলে।
দ্রাব্যতা গুণফল নীতি
নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো স্বল্পদ্রাব্য লবণের সম্পৃক্ত দ্রবণে লবণ থেকে উৎপন্ন ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন গুলির, যথোপযুক্ত ঘাতসহ মোলার ঘনমাত্রার গুণফলের সর্বোচ্চ মানকে ঐ তাপমাত্রায় লবণটির দ্রাব্যতা গুণফল বলে। এক্ষেত্রে লবণটির এক অণুর বিয়োজনে যত সংখ্যক কোনো নির্দিষ্ট আয়ন উৎপন্ন হয় তার ঘনমাত্রাকে সেই ঘাতে উন্নীত করা হয়।
নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একটি স্বল্প দ্রবণীয় লবণ দ্রবীভূত হলে সেটি আয়নে বিযোজিত হয়। এই আয়নসমূহের ঘনমাত্রা যত বেশি হবে, লবণটি তত বেশি দ্রবীভূত হবে। তবে, একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় লবণের দ্রবণে আয়নসমূহের ঘনমাত্রা একটি সর্বোচ্চ মান পর্যন্ত পৌঁছানোর পর আর বৃদ্ধি পায় না। এই সর্বোচ্চ মানকেই ঐ তাপমাত্রায় লবণের দ্রাব্যতার গুণফল বলে।
উদাহরণস্বরূপ, 20 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ক্যালসিয়াম ফসফেট দ্রবণে ক্যালসিয়াম আয়ন (Ca2+) এবং ফসফেট আয়ন (PO43-) এর ঘনমাত্রার গুণফল 2.5×10-36। সুতরাং, 20 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ক্যালসিয়াম ফসফেটের দ্রাব্যতার গুণফল 2.5×10-36।
দ্রাব্যতার উপর বিভিন্ন নিয়ামকের প্রভাব
দ্রাব্যতার উপর বিভিন্ন নিয়ামকের প্রভাব নিম্নরূপ:
- দ্রাবক: সাধারণত, দ্রাবকের প্রকৃতি দ্রবতার দ্রাব্যতাকে প্রভাবিত করে। দ্রাবক এবং দ্রবের মধ্যে আন্তঃআণবিক শক্তির প্রকৃতির উপর নির্ভর করে দ্রাব্যতা বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়। উদাহরণস্বরূপ, জল এবং লবণ সহ-আকর্ষী শক্তির মাধ্যমে একে অপরের সাথে আবদ্ধ হয়। এই কারণে, জলে লবণের দ্রাব্যতা বেশি। অন্যদিকে, তেল এবং পানি পৃথক্-আকর্ষী শক্তির মাধ্যমে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। এই কারণে, তেলে লবণের দ্রাব্যতা কম।
- তাপমাত্রা: তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে সাধারণত দ্রবতার দ্রাব্যতা বৃদ্ধি পায়। কারণ, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে দ্রবকের অণুগুলির গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং তারা দ্রবকে দ্রবীভূত হওয়ার জন্য বেশি সুবিধাজনক অবস্থায় আসে। উদাহরণস্বরূপ, 20 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় 100 গ্রাম জলে 36 গ্রাম সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবীভূত হতে পারে। কিন্তু 50 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় 100 গ্রাম জলে 43 গ্রাম সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবীভূত হতে পারে।
- চাপ: চাপ বৃদ্ধি করলে সাধারণত দ্রবতার দ্রাব্যতা বৃদ্ধি পায়, তবে তরল দ্রবণ ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে এটি খুবই সামান্য পরিবর্তন করে। কারণ, চাপ বৃদ্ধি করলে দ্রবকের অণুগুলির মধ্যে আকর্ষণ শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং তারা দ্রবকে দ্রবীভূত হওয়ার জন্য বেশি সুবিধাজনক অবস্থায় আসে। উদাহরণস্বরূপ, 20 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় 100 গ্রাম জলে 36 গ্রাম সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবীভূত হতে পারে। কিন্তু 100 মিটার পানির নিচে, 100 গ্রাম জলে 40 গ্রাম সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবীভূত হতে পারে।
- সম আয়ন প্রভাব: সম আয়ন প্রভাব হল এমন একটি প্রভাব যেখানে একটি নির্দিষ্ট আয়নের উপস্থিতি অন্য একটি আয়নের দ্রাব্যতা হ্রাস করে। কারণ, সম আয়নগুলি দ্রবণের মধ্যে একই ধরনের আকর্ষণ শক্তি বিকাশ করে, যা দ্রবণীয় আয়নগুলির সাথে প্রতিযোগিতা করে। উদাহরণস্বরূপ, ক্যালসিয়াম ফসফেটের দ্রাব্যতা ক্যালসিয়াম আয়ন (Ca2+) এর উপস্থিতিতে হ্রাস পায়। কারণ, ক্যালসিয়াম আয়নগুলি দ্রবণে ক্যালসিয়াম ফসফেটের আয়নগুলির সাথে প্রতিযোগিতা করে।
দ্রাব্যতার উপর বিভিন্ন নিয়ামকের প্রভাবগুলি রসায়ন, জীববিজ্ঞান, প্রকৌশল ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, দ্রাব্যতা ব্যবহার করে বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ প্রস্তুত করা হয়, ঔষধ তৈরি করা হয়, এবং পানি পরিশোধন করা হয়।