প্রতিধ্বনি কাকে বলে? প্রতিধ্বনি শুনবার জন্য প্রতিফলকের ন্যূনতম দূরত্ব

প্রতিধ্বনি কাকে বলে?

যখন কোনো শব্দ মূল শব্দ থেকে আলাদা হয়ে মূল শব্দের পুনরাবৃত্তি করে, তখন ঐ প্রতিফলিত শব্দকে প্রতিধ্বনি বলে।

কোনো শব্দ উৎস থেকে শব্দ করা হলে তা কোন কঠিন তলে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে আবার যদি শব্দের উৎসের নিকট ফিরে আসে, তখন সেই শব্দের পুনরাবৃত্তি শোনা যায়, শব্দের এই পুনরাবৃত্তিকেই শব্দের প্রতিধ্বনি বলে।

প্রতিধ্বনি শুনবার জন্য প্রতিফলকের ন্যূনতম দূরত্ব

ধরুন, এক ব্যক্তি একটি পাহাড়ের পাশে দাঁড়িয়ে জোরে চিৎকার করলো। এখন সে স্পষ্ট প্রতিধ্বনি শুনতে পাবে কিনা তা নির্ভর করবে ব্যক্তি এবং পাহাড়ের মধ্যবর্তী দূরত্বের উপর। কারণ ব্যক্তিটি নিজে যে চিৎকার করবে তা ১/১০ সেকেন্ড পর্যন্ত তার মস্তিষ্কে স্থায়ী হবে। এজন্য পাহাড় বা প্রতিফলকের দূরত্ব এমন হতে হবে যেন ১/১০ সেকেন্ড পর প্রতিধ্বনি তার কানে ফিরে আসে। নতুবা তার তৈরি শব্দের থেকে প্রতিধ্বনিটি আলাদা করতে পারবে না। যে সময় ধরে মানুষের মস্তিষ্কে মূল শব্দের অনুভূতি থেকে যায় অর্থাৎ ১/১০ সেকেন্ড সময়কে শব্দনুভূতির স্থায়িত্ব কাল বা শ্রুতি রেশ বলে।

ধরি, ব্যক্তি এবং পাহাড়ের মধ্যে দূরত্ব d হলে শ্রোতা প্রতিধ্বনি শুনতে পারবে।

অতএব, শব্দ ব্যক্তি হতে পাহাড় পর্যন্ত যেতে d দূরত্ব এবং পাহাড় থেকে ব্যক্তির কাছে ফিরে আসতে d দূরত্ব অর্থাৎ মোট 2d দূরত্ব অতিক্রম করবে।

আবার এ 2d দূরত্ব অতিক্রম করতে শব্দের ১/১০ সেকেন্ড প্রয়োজন হবে।

ধরুন, শব্দের বেগ = V

অর্থাৎ 2d = v × (১/১০)

বা, d = (১/২) × v × (১/১০)

বায়ুতে শব্দের বেগ, v = ৩৩১ মিটার/সে. ধরে আমরা পাই -

d = (১/২) × ৩৩১ × (১/১০) = ১৬.৫ মিটার

স্পষ্ট প্রতিধ্বনি শুনতে হলে শ্রোতা এবং প্রতিফলকের মধ্যে দূরত্ব অন্তত ১৬.৫ মিটার হতে হবে।

আজকাল বড় বড়  হল ঘর গুলো বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে তৈরি করা হচ্ছে। এসব হল ঘরের ছাদ এবং মঞ্চের পিছনের দেয়াল অবতলে বাঁকানো থাকে। এতে বক্তৃতার শব্দ ছাদে, দেয়ালে প্রতিফলিত হয়ে সকল শ্রোতার কানে এসে পৌঁছায়। এ ছাড়া বাকি তিনটি দেয়ালে নরম ও অসমতল জিনিস ব্যবহার করা হয়, যাতে শব্দ প্রতিফলিত না হয়। কারণ এসব দেয়াল হতেও শব্দ প্রতিফলিত হলে তা মূল শব্দের সাথে মিশে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে।

শব্দের প্রতিধ্বনির ব্যবহার

শব্দের প্রতিধ্বনি ব্যবহার করে সমুদ্রের গভীরতা, কুয়ার গভীরতা, খনিজ পদার্থের সন্ধান, উড়োজাহাজের উচ্চতা নির্ণয় থেকে শুরু করে বিভিন্নরকম কাজ করা যায়।

সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয়

সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয়ের জন্য একটি জাহাজের একপ্রান্ত হতে পানির ভিতরে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এরপর জাহাজের অপর প্রান্তে একই সময় বিস্ফোরণ স্থানের সমান গভীরতায় পানিতে গ্রাহকযন্ত্র হাইড্রোফোন স্থাপন করা হয়। কিছুক্ষণ পর গ্রাহক যন্ত্রটি উঠিয়ে নিলে এতে দুটি শব্দের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে। 

প্রথমটি বিস্ফোরকের শব্দ এবং দ্বিতীয়টি সমুদ্রের তলদেশে হতে আগত প্রতিধ্বনি। এখন, ইলেকট্রনিক ঘড়ির সাহায্যে শব্দ দুটির মধ্যবর্তী সময় নির্ণয় করুন। ধরুন, মধ্যবর্তী সময় t সেকেন্ড। আবার t সেকেন্ড শব্দটি সমুদ্রের তলদেশে গিয়ে আবার ফিরে আসে অর্থাৎ চিত্রানুযায়ী A হতে C তে শব্দ যেতে অতিক্রম করে, দূরত্ব d, আবার আসতে অতিক্রম করে দূরত্ব d। 

অর্থাৎ 2d = (v × t) 

বা, d = (v × t) ÷ 2

এখানে, d হলো সমুদ্রের গভীরতা।

খনিজ পদার্থের সন্ধান

খনিজ পদার্থের অস্তিত্ব ও অবস্থান নির্ণয়ের জন্য ভূ-তাত্ত্বিকগণ মাটির নিচে গর্ত করে, ঐ গর্তে শব্দ প্রেরণ করেন। এ শব্দ মাটির নিচে বিভিন্ন দিকে সঞ্চালিত হয় এবং মাটির ভিতর বিভিন্ন শিলাস্তর থেকে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। হাইড্রোফোন নামক যন্ত্রের সাহায্যে এ প্রতিফলিত শব্দ গ্রহণ করা হয়। এ শব্দগুলি গ্রাহকযন্ত্রে পৌঁছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজ নিজ আগমনের নকশা অংকন করে। এ নকশা হতে মূল শব্দ ও এর প্রতিধ্বনির মধ্যবর্তী সময় জেনে শিলার অবস্থান ও গঠন সম্পর্কে বুঝা যায়। এভাবে শিলার গঠন হতে এগুলো কোনো কোনো খনিজের সমন্বয়ে তৈরি তা নির্ণয় করে খনিজ পদার্থের সন্ধান পাওয়া যায়।

Premium By Raushan Design With Shroff Templates

Related Posts

Post a Comment