আগ্নেয় শিলা কাকে বলে?
সৃষ্টির প্রথমে পৃথিবী উত্তপ্ত গ্যাসীয়পিন্ড ছিল। এই গ্যাসপিন্ড ক্রমান্বয়ে তাপ বিকিরণ করে তরল হয়। পরে আরো তাপ বিকিরণ করে উপরিভাগ শীতল ও কঠিন আকার ধারণ করে। এভাবে গলিত অবস্থা থেকে ঘনীভূত বা কঠিন হয়ে যে শিলা গঠিত হয় তাকে আগ্নেয় শিলা বলে।
![]() |
চিত্রঃ আগ্নেয় শিলা |
ভূ-অভ্যন্তরে উত্তপ্ত ম্যাগমা শীতল ও কেলাসিত হয়ে আগ্নেয় শিলা গঠিত হয়। অগ্নিময় অবস্থা থেকে এই শিলার সৃষ্টি বলে একে আগ্নেয় শিলা বলা হয়। ইংরেজিতে এ ধরনের শিলাকে Ignous Rock বলে। Igneous শব্দের অর্থ আগুন। আগ্নেয় শিলা পৃথিবীর প্রথম পর্যায়ের শিলা বলে একে প্রাথমিক শিলাও বলা হয়। এ শিলায় কোনো স্তর নেই, তাই এই শিলার অপর নাম অস্তরীভূত শিলা। এই শিলায় কোনো জীবাশ্ম নেই। আগ্নেয়গিরি বা ভূমিকম্পের ফলে অনেক সময় ভূ-ত্বকের দুর্বল অংশে ফাটলের সৃষ্টি হয়। তখন পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে উত্তপ্ত গলিত লাভা নির্গত হয়ে আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি করে। এভাবে ব্যাসল্ট ও গ্রানাইট শিলার সৃষ্টি হয়েছে।
আগ্নেয় শিলার বৈশিষ্ট্য
- স্তরবিহীন: উত্তপ্ত গলিত অবস্থা থেকে ঠান্ডা হয়ে জমাট বেঁধে এই জাতীয় শিলার সৃষ্টি হয় বলে এতে কোনো স্তর থাকে না।
- জীবাশ্মবিহীন: উত্তপ্ত গলিত পদার্থ থেকে আগ্নেয় শিলার উৎপত্তি বিধায় কোনো প্রাণি বা উদ্ভিদের অস্তিত্ব আশা করা যায় না। এ কারণে এ জাতীয় শিলার মধ্যে জীবাশ্ম পাওয়া যায় না।
- কেলাসিত: উত্তপ্ত গলিত অবস্থা থেকে তাপ বিকিরণ করে এ জাতীয় শিলা তৈরি হয় বলে ক্ষেত্রবিশেষে কেলাসিত হয় বা নির্দিষ্ট আকারে দানা বাঁধে।
- অপ্রবেশ্য: আগ্নেয় শিলার দানাগুলির মধ্যে কোনো ছিদ্র না থাকায় এই শিলায় পানি প্রবেশ করতে পারে না। তাই আগ্নেয় শিলা অপ্রবেশ্য।
- সুদৃঢ় ও সুসংহত: উত্তপ্ত গলিত অবস্থা থেকে তাপ বিকিরণ করে উৎপন্ন হয় বলে এ শিলা সুদৃঢ় ও সুসংহত।
- প্রাচীনতম: আগ্নেয় শিলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম শিলা। এই শিলা থেকে অন্যান্য শিলার উৎপত্তি হয়েছে।
- অপেক্ষাকৃত ভারী: আগ্নেয় শিলা অন্যান্য শিলার চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভারী।
আগ্নেয় শিলার শ্রেণিবিভাগ
আগ্নেয় শিলাকে দুইভাবে ভাগ করা যায়। যথাঃ
ক) উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে এবং
খ) গঠনকারী খনিজ উপাদান অনুসারে।
ক) উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে
উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে আগ্নেয় শিলাকে পুনরায় দুইভাগে বিভক্ত করা যায়।
যথা-
১. বহিঃজ বা নিঃসারী আগ্নেয় শিলা এবং
২. অন্তঃজ বা উদবেধী আগ্নেয় শিলা।
১. বহিঃজ বা নিঃসারী আগ্নেয় শিলা : পৃথিবীর অভ্যন্তরে গলিত পদার্থ জ্বালামুখ বা ফাঁটল দিয়ে বাইরে নির্গত হয়ে ক্রমে ঠান্ডা হয়ে যে শিলা গঠিত হয় তাই বহিঃজ আগ্নেয় শিলা। যেমন- ব্যাসল্ট, পিউমিস। ভূ-অভ্যন্তরের গলিত পদার্থগুলোর উৎক্ষিপ্ত হওয়ার উপর ভিত্তি করে এ শিলাকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
যথাঃ
- বিস্ফোরক প্রকৃতিরঃ অগ্ন্যুৎপাতের সময় কিছু পদার্থ প্রচন্ড বেগে বাইরে উৎক্ষিপ্ত হয়ে পতিত হয় এবং পরে জমাট বেঁধে শিলায় পরিণত হয়, একে বিস্ফোরক আগ্নেয় শিলা বলে।
- শান্তপ্রকৃতির আগ্নেয় শিলাঃ অগ্ন্যুৎপাতের সময় অপেক্ষাকৃত ভারী গলিত পদার্থ ধীরে ধীরে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয়ে শিলায় পরিণত হয়, একে শান্তআগ্নেয়শিলা বলে।
২. অন্তঃজ বা উদ্বেধী আগ্নেয় শিলা : কোনো কোনো সময় তরল ম্যাগমা ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছাতে না পেরে পৃথিবীর অভ্যন্তরেই জমাট বেঁধে যে শিলা গঠন করে তাকে অন্তঃজ শিলা বলে। অবস্থানের উপর ভিত্তি করে এ শিলাকে আবার দুইভাগে ভাগ করা যায়।
যথাঃ
- পাতালিক: ভূ-পৃষ্ঠের বহু নিচে অবস্থিত এই শিলা কেলাসিত। যেমন- গ্যাব্রো।
- উপ-পাতালিক: ভূ-গর্ভস্থ ম্যাগমা উপরে আসার সময় ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি এসে জমাট বেঁধে এই শিলা গঠন করে। যেমন- ডলোরাইট।
খ) গঠনকারী খনিজ উপাদান অনুসারে আগ্নেয় শিলা
এ শিলাকে আবার চারভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
- ফেলাপসিক : অধিক পরিমাণে ফেলস্পার, সিলিকা মিশ্রিত থাকে। এরা হালকা বর্ণের হয়ে থাকে। যেমন- গ্রানাইট, রায়োলাইট।
- মেফিক : এতে ম্যাগনেসিয়াম ও লোহার পরিমাণ বেশি থাকে। এরা ব্যাসল্ট জাতীয়। এসব ধূসর কালো বর্ণের হয়। যেমন- ব্যাসল্ট, গ্যাব্রো।
- উচ্চ মাত্রার মেফিক : অধিক মাত্রায় লোহা ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। প্রধান খনিজ হলো অলিভিন, পাইরাক্সিন। গাঢ় সবুজ থেকে কালো বর্ণের। যেমন- পেরিডোটাইট, কমাডোটাইট।
- ফেলসিক ও মেফিকের মাঝামাঝি : এই জাতীয় শিলা এ্যান্ডেসাইট ধরনের। প্রধান খনিজ হলো- হর্নবোন্ড, সোডিয়াম ফেলসপার। বর্ণ গাঢ়। যেমন- ডাইয়োরাইট, অ্যান্ডেসাইট।
Post a Comment
Post a Comment