সলিনয়েড কি
সলিনয়েড হচ্ছে কাছাকাছি ঘন সন্নিবিষ্ট অনেকগুলো প্যাঁচযুক্ত লম্ব বেলনাকার কয়েল বা তার কুণ্ডলী।
স্প্রিং এর আকারে পাকানো অত্যন্ত ঘনসন্নিবিষ্ট একটি অন্তরিত পরিবাহীকে সলিনয়েড
বলে।
একটি কার্ডবোর্ডকে বাঁকিয়ে চোঙাকৃতি করে এর উপর অন্তরিত পরিবাহী তার পেঁচিয়ে
সলিনয়েড তৈরি করা যায়। চিত্রে একটি সলিনয়েড দেখানো হয়েছে। সলিনয়েডের প্রতিটি
পাকের কেন্দ্র একই রেখায় অবস্থান করে। একে সলিনয়েড বলে।
সলিনয়েডের প্রতিটি পাকের ভিতর দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ একই দিকে হয় বলে প্রতিটি পাকই
চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি করে। তাই সলিনয়েডের সব পাকের সম্মিলিত চৌম্বক
ক্ষেত্রের প্রাবল্য অনেক বেশি হয়। মূলত সলিনয়েডের প্রতি একক দৈর্ঘ্যের পাক
সংখ্যা যত বেশি হয় চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রাবল্য তত বেশি হয় এবং সলিনয়েডের মধ্য
দিয়ে যত বেশি তড়িৎ প্রবাহ হবে চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রাবল্যও তত বেশি হবে।
সলিনয়েডের বলরেখার প্রকৃতি একটি দণ্ড চুম্বকের বলরেখার মত। সেজন্য বলা যায় যে,
সলিনয়েডের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হলে সেটি দণ্ড চুম্বকের ন্যায় আচরণ করে।
সলিনয়েডের ভিতরে বলরেখাগুলো অক্ষের সমান্তরাল। এক্ষেত্রেও বলরেখাগুলো আবদ্ধ
বক্রপথ।
বলরেখার অভিমুখ কিভাবে স্থির করা হবে?
ডানহাতি বৃদ্ধাঙ্গুলী নিয়ম ব্যবহার করে। সলিনয়েডকে ডান হাতের তালুতে নিয়ে
মুঠিবদ্ধ করে বৃদ্ধাঙ্গুলীকে সলিনয়েডের সমান্তরালে রাখলে যদি মুঠিবদ্ধ
আঙ্গুলগুলো তড়িৎ প্রবাহের দিকে নির্দেশ করে তবে বৃদ্ধাঙ্গুলী উত্তর মেরু
নির্দেশ করবে।
সলিনয়েডের চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রাবল্য বৃদ্ধি
সলিনয়েডের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ করলে অধিকাংশ বলরেখা সলিনয়েডের অক্ষ বরাবর
সজ্জিত হয়ে তীব্র চৌম্বক প্রাবল্যের সৃষ্টি করে। ফলে এটি দণ্ড চুম্বকের ন্যায়
আচরণ করে (চিত্র-ক)।
এখন সলিনয়েডের মধ্যে কোনো লোহার দণ্ড প্রবেশ করিয়ে তড়িৎ প্রবাহ করলে
দণ্ডটি এই চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে চুম্বকে পরিণত হয়। একে তাড়িতচুম্বক বলে।
তড়িৎ প্রবাহের দিক পরিবর্তন করলে তাড়িতচুম্বকের মেরু পরিবর্তিত হয়। এখানে আরো
একটি ঘটনা ঘটে। সেটি হলো, লোহার দণ্ড প্রবেশ করানোর ফলে তড়িৎ প্রবাহের ফলে
সৃষ্ট চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রাবল্য অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়। এর কারণ হলো, লোহার
দণ্ড প্রবেশ করালে যেহেতু সেটি চুম্বকের পরিণত হয় এবং দণ্ড চুম্বকের ন্যায়
আচরণ করে, সেহেতু তার নিজস্ব একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। এই চৌম্বক
ক্ষেত্রের দিক তড়িৎ প্রবাহের ফলে সৃষ্ট চৌম্বক ক্ষেত্রের দিকের সমান্তরাল। এই
দুই ক্ষেত্র একত্রে মিলত হয়ে মোট চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রাবল্য আরো বৃদ্ধি করে
দেয় (চিত্র-খ)।
চিত্র- গ তে সলিনয়েডের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হলে সলিনয়েডের কোন প্রান্তে
কোন মেরু সৃষ্টি হবে তা বোঝানো হয়েছে। কোন প্রান্তে কোন মেরু হবে সেটা জানবার
জন্য সহজ পদ্ধতি হলো আপনার ডান হাতের বৃদ্ধঙ্গলী খাড়া করুন এবং অন্য
অঙ্গুলীগুলো বাঁকা করুন। মনে করুন সলিনয়েটি আপনার বাঁকা আঙ্গুলে ধরে আছেন।
এবার বৃদ্ধাঙ্গুলীর অগ্রভাগ দিয়ে আপনার নাক স্পর্শ করুন। অর্থাৎ আপনি
সলিনয়েডের মধ্য দিয়ে দেখছেন। এই অবস্থায় সলিনয়েডের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের
দিক যদি আপনার বাঁকা আঙ্গুলগুলো অগ্রভাগ দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের দিক হয়ে থাকে তবে
আপনার দিকে উত্তর মেরু বা অপরদিকে দক্ষিণমেরু সৃষ্টি হবে।
চিত্র- গ তে N দিয়ে উত্তর মেরু (North Pole) এবং S দিয়ে দক্ষিণ মেরু (South
pole) বোঝানো হয়েছে।
সলিনয়েডের ব্যবহার
- বৈদ্যুতিক ঘণ্টা
- তাড়িত চৌম্বক কাঁটার দেয়াল ঘড়ি রিলে
- বৈদ্যুতিক মোটর ইত্যাদিতে।
Post a Comment
Post a Comment