প্রাচীন অনুবর্তন কাকে বলে? প্রাচীন অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্য

প্রাচীন অনুবর্তন কাকে বলে?

প্রাচীন অনুবর্তন হল এমন একটি শিক্ষণ প্রক্রিয়া যেখানে একটি স্বাভাবিক উদ্দীপককে একটি বিকল্প উদ্দীপকের সাথে যুক্ত করা হয়। ফলে, বিকল্প উদ্দীপকটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার কারণ হয়ে ওঠে।

প্রাচীন অনুবর্তনের দুটি প্রধান উপাদান রয়েছে:

  • স্বাভাবিক উদ্দীপক: এটি এমন একটি উদ্দীপক যা স্বতঃস্ফূর্তভাবে একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
  • বিকল্প উদ্দীপক: এটি এমন একটি উদ্দীপক যা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না।

প্রাচীন অনুবর্তনের একটি উদাহরণ হল একটি কুকুরকে খাবার দেওয়ার সাথে ঘণ্টা বাজানো। প্রথমদিকে, কুকুরটি ঘণ্টা বাজানো শুনে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। কিন্তু, যদি ঘণ্টা বাজানো এবং খাবার দেওয়ার মধ্যকার সম্পর্ক বারবার প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে কুকুরটি ঘণ্টা বাজানো শুনে লালাক্ষরণ করতে শুরু করবে। কারণ, কুকুরটি শিখেছে যে ঘণ্টা বাজানো খাবারের একটি সূচক।

প্রাচীন অনুবর্তন বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে, যেমন:

  • শেখার ক্ষেত্রে: প্রাচীন অনুবর্তন শিশুদের ভাষা, নিয়ম-কানুন এবং সামাজিক আচরণ শিখতে সাহায্য করতে পারে।
  • চিকিৎসার ক্ষেত্রে: প্রাচীন অনুবর্তন ভয়, উদ্বেগ এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যাগুলির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
  • বিপণনের ক্ষেত্রে: প্রাচীন অনুবর্তন পণ্য এবং পরিষেবাগুলির জন্য পছন্দ তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রাচীন অনুবর্তনের প্রবক্তা হলেন রাশিয়ান শারীরতত্ত্ববিদ আইভান প্যাভলভ। তিনি ১৯ শতকের শেষের দিকে একটি বিখ্যাত পরীক্ষা চালিয়েছিলেন যা প্রাচীন অনুবর্তনের ধারণাটি প্রমাণ করে। প্যাভলভ একটি কুকুরকে খাবার দেওয়ার সময় একটি ঘণ্টা বাজাতেন। কিছুদিন পরে, কুকুরটি ঘণ্টা বাজানো শুনেই লালাক্ষরণ করতে শুরু করল, যদিও সে খাবার পায়নি। কারণ, কুকুরটি শিখেছে যে ঘণ্টা বাজানো খাবারের একটি সূচক।

প্রাচীন অনুবর্তন একটি শক্তিশালী শিক্ষণ প্রক্রিয়া যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।

প্রাচীন অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্য

প্রাচীন অনুবর্তনের চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

  • স্বাভাবিক উদ্দীপক এবং স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া: প্রাচীন অনুবর্তনের জন্য একটি স্বাভাবিক উদ্দীপক এবং একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন। স্বাভাবিক উদ্দীপক স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, খাবার একটি স্বাভাবিক উদ্দীপক যা লালাক্ষরণের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

  • বিকল্প উদ্দীপক এবং অনুবর্তিত প্রতিক্রিয়া: প্রাচীন অনুবর্তনের জন্য একটি বিকল্প উদ্দীপক এবং একটি অনুবর্তিত প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন। বিকল্প উদ্দীপক স্বাভাবিকভাবে অনুবর্তিত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। কিন্তু, যদি এটি বারবার স্বাভাবিক উদ্দীপকের সাথে যুক্ত করা হয়, তাহলে এটি অনুবর্তিত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ঘণ্টা একটি বিকল্প উদ্দীপক যা লালাক্ষরণের অনুবর্তিত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

  • সমাপ্ততা: প্রাচীন অনুবর্তনের জন্য একটি স্বাভাবিক উদ্দীপক এবং একটি বিকল্প উদ্দীপকের মধ্যে একটি সম্পর্ক স্থাপন করা প্রয়োজন। এই সম্পর্কটি বারবার উপস্থাপনা এবং শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়।

  • শক্তিশালীকরণ: প্রাচীন অনুবর্তন শক্তিশালীকরণ দ্বারা উন্নত হতে পারে। শক্তিশালীকরণ হল এমন একটি প্রক্রিয়া যা একটি নির্দিষ্ট আচরণের সম্ভাবনা বাড়ায়। প্রাচীন অনুবর্তনে, শক্তিশালীকরণ সাধারণত স্বাভাবিক উদ্দীপক প্রদানের মাধ্যমে করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি ঘণ্টা বাজানো এবং খাবার দেওয়ার মধ্যকার সম্পর্ক বারবার প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে কুকুরটি ঘণ্টা বাজানো শুনে লালাক্ষরণের সম্ভাবনা বাড়বে।

প্রাচীন অনুবর্তনের এই বৈশিষ্ট্যগুলি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা একটি নির্দিষ্ট খাবার বা ব্যক্তির চিন্তা করার সময় একটি নির্দিষ্ট আবেগ অনুভব করতে পারি। এটি প্রাচীন অনুবর্তনের কারণে হয়। আমাদের মস্তিষ্ক এই উদ্দীপকগুলিকে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতার সাথে যুক্ত করে।

Premium By Raushan Design With Shroff Templates

Related Posts

Post a Comment