অংশীদারি কারবার কাকে বলে? অংশীদারি কারবারের মূল বৈশিষ্ট্য | অংশীদারি কারবারের সুবিধা ও অসুবিধা

অংশীদারি কারবার কাকে বলে?

অংশীদারি কারবার হলো দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে গঠিত একটি ব্যবসায়িক সংস্থা। এই চুক্তির মাধ্যমে অংশীদাররা ব্যবসায়ের সম্পদ, দায় এবং লাভ-ক্ষতি ভাগ করে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

অংশীদারি কারবারের মূল বৈশিষ্ট্য

অংশীদারি কারবারের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল:

  • দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে চুক্তি: অংশীদারি কারবার গঠনের জন্য কমপক্ষে দুইজন ব্যক্তির মধ্যে একটি চুক্তি প্রয়োজন। এই চুক্তিতে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য, পরিচালনার পদ্ধতি, সম্পদ ও দায়ের ভাগ, এবং লাভ-ক্ষতির বন্টন সম্পর্কে বিধান থাকে।
  • সম্পদ ও দায়ের ভাগ: অংশীদাররা ব্যবসায়ের সম্পদ ও দায় ভাগ করে নেয়। সম্পদ ও দায়ের ভাগ অংশীদারদের মূলধন অবদানের ভিত্তিতে বা চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত হতে পারে।
  • লাভ-ক্ষতির বন্টন: অংশীদাররা ব্যবসায়ের লাভ-ক্ষতি ভাগ করে নেয়। লাভ-ক্ষতির বন্টন অংশীদারদের মূলধন অবদানের ভিত্তিতে বা চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত হতে পারে।
  • ব্যবসার পরিচালনা: অংশীদাররা ব্যবসার পরিচালনায় অংশ নিতে পারে। অংশীদারদের মধ্যে ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে বা একজন অংশীদারকে এককভাবে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।

অংশীদারি কারবারের সুবিধা

অংশীদারি কারবারের সুবিধাগুলি হল:

  • অধিক পুঁজি: অংশীদারি কারবারে একাধিক ব্যক্তির সম্পদ একত্রিত হয়, যা ব্যবসায়ের জন্য আরও বেশি পুঁজি প্রদান করে। এটি ব্যবসায়ের বৃদ্ধি এবং সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান করতে পারে।
  • দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়: অংশীদাররা বিভিন্ন দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে ব্যবসায় অংশগ্রহণ করতে পারে। এটি ব্যবসায়ের সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ায়। উদাহরণস্বরূপ, একজন অংশীদারের মধ্যে বিপণন দক্ষতা থাকতে পারে, অন্য অংশীদারের মধ্যে আর্থিক দক্ষতা থাকতে পারে।
  • ঝুঁকি কমানো: অংশীদারি কারবারে একজন অংশীদারের ক্ষতি অন্য অংশীদারদের ক্ষতিতে সীমিত থাকে। এটি ব্যবসায়ের দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ায়।
  • স্বল্প আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা: অংশীদারি কারবার গঠন এবং পরিচালনা করার জন্য কম আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা থাকে। এটি অংশীদারদের জন্য ব্যবসায় শুরু করা সহজ করে তোলে।
  • ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও সহযোগিতা: অংশীদাররা ব্যবসায়ের পরিচালনায় ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ ও সহযোগিতা করতে পারে। এটি ব্যবসায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে আরও কার্যকর এবং দক্ষ করে তোলে।
  • ধরনগত নমনীয়তা: অংশীদারি কারবারগুলি বিভিন্ন ধরণের ব্যবসায়ের জন্য উপযুক্ত। এটি ব্যবসায়ীদের তাদের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে ব্যবসা গঠন করতে দেয়।
  • দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ: অংশীদারদের মধ্যে সহযোগিতা থাকায় ব্যবসায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ দ্রুত করা যায়।
  • ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতি: অংশীদাররা ব্যবসায়ের সাফল্যে ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে। এটি ব্যবসায়ের সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ায়।
  • কর্মীদের অনুপ্রাণিত করা: অংশীদারদের মধ্যে সহযোগিতা এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা কর্মীদের অনুপ্রাণিত করতে পারে।
  • ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলা: অংশীদারদের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে ওঠে যা ব্যবসায়ের দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

অংশীদারি কারবারের অসুবিধা

অংশীদারি কারবারের অসুবিধাগুলি হল:

  • অপরিচ্ছন্নতা: অংশীদারি কারবারে অংশীদারদের মধ্যে মতবিরোধের সম্ভাবনা থাকে, যা ব্যবসায়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • অদক্ষতা: অংশীদারদের মধ্যে একজন অদক্ষ হলে তা ব্যবসায়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • অতিরিক্ত জটিলতা: অংশীদারি কারবারে আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা থাকে।
  • সীমিত মূলধন: অংশীদারদের মধ্যে একজনের সম্পদ সীমিত হলে তা ব্যবসায়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • অপরিবর্তনশীলতা: অংশীদারদের মধ্যে একজনের অবদান পরিবর্তিত হলে তা ব্যবসায়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • সীমিত ঋণযোগ্যতা: অংশীদারি কারবারের ঋণযোগ্যতা সীমিত।
  • ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা: অংশীদাররা ব্যবসায়ের সমস্ত দায়ের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ।
  • ব্যক্তিগত ঝুঁকি: অংশীদারদের মধ্যে একজনের ব্যক্তিগত সম্পদ ব্যবসায়ের জন্য ব্যবহৃত হলে তা ব্যক্তিগত ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
  • অব্যক্ত দায়বদ্ধতা: অংশীদাররা ব্যবসায়ের সাথে সম্পর্কিত অপ্রত্যাশিত দায়ের জন্য দায়বদ্ধ হতে পারে।
  • অবসাদে জটিলতা: অংশীদারদের মধ্যে একজনের অবসর গ্রহণ বা মৃত্যু হলে ব্যবসায়ের জন্য জটিলতা তৈরি হতে পারে।

বাংলাদেশে, অংশীদারি কারবার পরিচালনার জন্য ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন প্রযোজ্য। এই আইনে অংশীদারি কারবারের গঠন, পরিচালনা, এবং সমাপ্তির বিষয়ে বিধান রয়েছে।

Premium By Raushan Design With Shroff Templates

Related Posts

Post a Comment