বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল: বাংলাদেশের প্রথম সড়ক সুড়ঙ্গ
বাংলাদেশের চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলটি ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। এই সুড়ঙ্গটি বাংলাদেশের প্রথম সড়ক সুড়ঙ্গ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গ।
সুড়ঙ্গটি চট্টগ্রাম শহরের বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হয়ে নদীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা প্রান্তের চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে গিয়ে নদীর অপর প্রান্তে পৌঁছে নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে যুক্ত করেছে। এই সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যুক্ত হয়।
সুড়ঙ্গটির দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার এবং এটি ১৫০ ফুট গভীরে অবস্থিত। চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এই সুড়ঙ্গের নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণ ব্যয়
মূল ব্যয়
কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ ব্যয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে:
চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন হয়েছে ৪ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা।
ঋণ পরিশোধের শর্তাবলী
- ঋণের মেয়াদ ২০ বছর।
- সুদের হার ২%।
ঋণ পরিশোধের উৎস
- টানেলের টোল আয় থেকে।
- অন্যান্য সরকারি রাজস্ব থেকে।
কর্ণফুলী টানেলের উপকারিতা
কর্ণফুলী টানেল বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প। এই সুড়ঙ্গটি চট্টগ্রাম শহরের সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করবে এবং চট্টগ্রামের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
কর্ণফুলী টানেলের উপকারিতা নিম্নরূপ:
- যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি: কর্ণফুলী টানেলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরের সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে। এটি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে ভ্রমণের সময় ও ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে।
- ভ্রমণ নিরাপত্তা বৃদ্ধি: কর্ণফুলী নদীর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। কর্ণফুলী টানেলের মাধ্যমে এই ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
- পরিবেশ দূষণ হ্রাস: কর্ণফুলী নদীর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের ফলে পরিবেশ দূষণ হয়। কর্ণফুলী টানেলের মাধ্যমে এই দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
- শিল্প ও বাণিজ্যের বিকাশ: কর্ণফুলী টানেলের মাধ্যমে চট্টগ্রামের শিল্প ও বাণিজ্যের বিকাশে সহায়তা হবে। এটি চট্টগ্রামকে একটি আরও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করবে।
- পর্যটন শিল্পের বিকাশ: কর্ণফুলী টানেলের মাধ্যমে চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্পের বিকাশে সহায়তা হবে। এটি চট্টগ্রামকে একটি আরও জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করবে।
- কর্মসংস্থান সৃষ্টি: কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: কর্ণফুলী টানেলের মাধ্যমে চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে।
- দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি: কর্ণফুলী টানেলের মাধ্যমে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নতি হবে।
- বাংলাদেশের ভাবমূর্তির উন্নতি: কর্ণফুলী টানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নত অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার ভাবমূর্তি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে।
- জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান: কর্ণফুলী টানেলের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান হবে।
কর্ণফুলী টানেলের উদ্বোধন বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই সুড়ঙ্গটি চট্টগ্রাম শহরের জন্য একটি বড় আশীর্বাদ হবে এবং চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
একনজরে কর্ণফুলী টানেল
- মোট দৈর্ঘ্য – ৯.৩৯ কি.মি
- মূল টানেলের দৈর্ঘ্য – ৩.৩১৫ কিমি
- এপ্রোচ সড়কের দৈর্ঘ্য – ৫.৩৫ কিমি
- টানেলের ধরন – দুই লেনের ডুয়েল টানেল
- প্রবেশপথ – চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরের কাছে, কর্ণফুলী নদীর ভাটির দিকে নেভি কলেজের কাছে
- বহির্গমন – আনোয়ারা প্রান্তে সার কারখানার কাছে
কর্ণফুলী টানেল নিয়ে কয়েকটি সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর
কর্ণফুলী টানেল বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প। এই সুড়ঙ্গটি চট্টগ্রাম শহরের সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করবে এবং চট্টগ্রামের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কর্ণফুলী টানেল নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে। এখানে ২০ টি সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হল:
প্রশ্ন ১: কর্ণফুলী টানেল কোথায় অবস্থিত?উত্তর: কর্ণফুলী টানেল বাংলাদেশের চট্টগ্রাম শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কর্ণফুলী নদীর নিচে অবস্থিত। টানেলটি চট্টগ্রাম শহরের বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হয়ে নদীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা প্রান্তের চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে গিয়ে নদীর অপর প্রান্তে পৌঁছে নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে যুক্ত করেছে।
প্রশ্ন ২: কর্ণফুলী টানেলের দৈর্ঘ্য কত?
উত্তর: কর্ণফুলী টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার। এটি বাংলাদেশের প্রথম সড়ক সুড়ঙ্গ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ।
প্রশ্ন ৩: কর্ণফুলী টানেলের গভীরতা কত?
উত্তর: কর্ণফুলী টানেলের গভীরতা ১৫০ ফুট।
প্রশ্ন ৪: কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজ কখন শুরু হয়েছিল?
উত্তর: কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজ ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর শুরু হয়েছিল।
প্রশ্ন ৫: কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজ কখন শেষ হয়েছিল?
উত্তর: কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজ ২০২৩ সালের ৩০ জুন শেষ হয়েছিল।
প্রশ্ন ৬: কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ ব্যয় কত?
উত্তর: কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ ব্যয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। বাকি অর্থায়ন বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থ দিয়ে করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৭: কর্ণফুলী টানেলের টোল কত?
উত্তর: কর্ণফুলী টানেলের টোল যানবাহনের ধরন অনুসারে নির্ধারণ করা হয়। ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য টোল ১০০ টাকা, মাইক্রোবাসের জন্য ২০০ টাকা, বাসের জন্য ৩০০ টাকা, ট্রকের জন্য ৫০০ টাকা এবং ট্রেইলারের জন্য ১০০০ টাকা।
প্রশ্ন ৮: কর্ণফুলী টানেল কখন থেকে চালু হয়েছিল?
উত্তর: কর্ণফুলী টানেল ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে চালু হয়েছিল।
প্রশ্ন ৯: কর্ণফুলী টানেল চট্টগ্রাম শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, কর্ণফুলী টানেল চট্টগ্রাম শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করবে। এই সুড়ঙ্গটি চট্টগ্রাম শহরের সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি করবে। এটি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে ভ্রমণের সময় ও ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে।
প্রশ্ন ১০: কর্ণফুলী টানেল চট্টগ্রামের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, কর্ণফুলী টানেল চট্টগ্রামের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই সুড়ঙ্গটি চট্টগ্রামের শিল্প ও বাণিজ্যের বিকাশে সহায়তা করবে।
Post a Comment
Post a Comment